ঢাকা,মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

বৃদ্ধা মরিয়মের বাড়ি থেকে লুটে নেওয়া  দুইটি গরু ১৭ দিনেও উদ্ধার করতে পারেনি পেকুয়া থানা পুলিশ 

নিজস্ব প্রতিবেদক,চকরিয়া
মারা গেলে নিজের দাফন কাফনের খরচ মেটাতে আগে থেকে দুইটি গরু লালন পালন করছিলেন কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের বাসিন্দা অসহায় বৃদ্ধা মরিয়ম খাতুন (৭০)। কিন্তু তাঁর সেই আশা নিরাশায় পরিণত করেছে এলাকার পুরানো ডাকাত নবী হোসেন ওরফে নবু ডাকাতের লোকজন। গত ২৯ মার্চ ভোররাতে বাড়িতে হানা দিয়ে অন্ত্রের মুখে লুটে নিয়ে গেছে বৃদ্ধা মরিয়ম খাতুনের শেষ সম্বল গরু দুটি। এ ঘটনায় পেকুয়া থানায় এজাহার জমা দেওয়া হলেও পুলিশ গেল ১৭ দিনেও লুন্ডিত গরু দুটি উদ্ধার কিংবা ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
উল্টো গরু লুটের ঘটনায় থানায় এজাহার দেওয়ায় অভিযুক্ত নবু ডাকাত, তাঁর দুই জামাতা গিয়াস উদ্দিন, ইসমাইল ও ছেলেরা ক্ষিপ্ত হয়ে নানাভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। এ অবস্থায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বৃদ্ধা মরিয়ম খাতুন ও তাঁর পরিবার সদস্যরা।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, টইটং ইউনিয়নের
পাহাড়ি ছড়া থেকে বালু উত্তোলনের আধিপত্য নিয়ে তুচ্ছ ঘটনার জেরে ঘটনার রাতে টইটং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি ঢালারমুখ এলাকার অসহায় বৃদ্ধা  আবদুল করিমের বাড়িতে হানা দিয়ে তাঁর স্ত্রী মরিয়ম খাতুনের পালিত দুটি গরু জোরপূর্বক গোয়ালঘর থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় নবু ডাকাতের লোকজন । তবে নিয়ে যাবার সময় বৃদ্ধাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যদি তেমার প্রকৃত গরু হয় সকালে ফেরত দেওয়া হবে। কথামত সকালে বৃদ্ধা  মরিয়ম খাতুন নবু ডাকাতের বাড়িতে গেলে উল্টো মারধর করে বৃদ্ধাকে তাড়িয়ে দেয়।
 এ ঘটনায় বৃদ্ধা মরিয়ম খাতুন বাদি হয়ে ওইদিন  পেকুয়া থানায় অভিযোগ জমা দিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, থানায় অভিযোগটি জমা দেওয়ার পর ১৭ দিন সময় অতিবাহিত হলেও পুলিশ এব্যাপারে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি লুন্ডিত গরু দুটি উদ্ধারে স্থানীয়  জনপ্রতিনিধির কাছে ধর্ণা দিয়েও অদ্যবদি ন্যায়সংগত কোন প্রতিকার পাননি।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, গত ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার রাত ৮ টার দিকে টইটং ইউনিয়নের সোননাইছড়ি ঢালারমুখ রমিজপাড়ায় বালু উত্তোলনের বিষয় নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে হামলা ও মারামারি হয়েছে। স্থানীয় আজিজুর রহমান গং ও ডাকাত নবু মেম্বার গংদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের জের ধরে গভীর রাতে নবু ডাকাতের  লোকজন প্রতিপক্ষকে বাড়িতে না পেয়ে পাশের  আত্মীয় মরিয়ম খাতুনের বাড়ি থেকে দুটি গরু নিয়ে যায়।
গরু মালিক বৃদ্ধা মরিয়ম খাতুন (৭০) জানান, আমরা বালু উত্তোলনে জড়িত না থাকলেও নবু ডাকাতের লোকজন এসে হুমকি ধমকি দিয়ে আমার বাড়ি থেকে দুটি গরু নিয়ে যায়। তখন আমি নামাজ পড়ছিলাম। নামাজ থেকে দৌড়ে গিয়ে তাকে বাঁধা দিলে সকালে গরু ফেরত দেবে বলে কথা দেন। আমি সকালে  তার বাড়িতে গেলে গরু ফেরত না দিয়ে উল্টো আমাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়।
এমনকি আমার ছেলে মোহাম্মদ হোসেন পাহাড়ে খামার করে গরু পালন করে। তারা সেখানে গিয়েও গরু লুটের চেষ্টা চালায়। আমার ছেলে পাহাড় থেকে গরু গুলো তাদের ভয়ে সরিয়ে ফেলে। কিন্তু আমার দুটি গরু এখনো উদ্ধার হয়নি।
আমি ঘটনার পর স্থানীয় টইটং ইউনিয়ন পরিষদের  চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তিনি আমাকে থানায় যেতে বলে। পুলিশের কাছেও গিয়েছি। থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছি। তবে এতকিছুর পরেও আমি আইনী কোন সহায়তা পাচ্ছি না।
অসহায় বৃদ্ধা মরিয়ম খাতুন অভিযোগ করে বলেন, অভিযুক্ত নবু ডাকাত একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং খুবই প্রভাবশালী। তাকে এলাকার সবাই ভয় পান। আমার স্বামীও বৃদ্ধ। দুটি চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। এক মেয়ে আছে তার স্বামীও মারা গেছে। বিধবা মেয়ে ও অন্ধ স্বামীকে নিয়ে বেঁচে আছি। এ দুটি গরু ছাড়া আমার কোন সম্বল নেই। পাহাড় থেকে ঘাস কেটে এনে গরু পরিচর্যা করি। কোরবানের সময় বিক্রির জন্য চিন্তা করছিলাম। বিক্রিত টাকা আমার মৃত্যুর পর দাফন-কাফনের জন্য জমা করার আশায় ছিলাম। কিন্তু ডাকাতরা আমার আশার সর্বনাশ করেছে। আমি এব্যাপারে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারের জরুরি হস্তক্ষেপ চাই। আমার গরু দুটি ফেরত চাই।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত নবী হোসেন ওরফে নবু ডাকাত স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমি গরু লুট করেনি। তারা থানায় মিথ্যা অভিযোগ করছে। আমার ছেলেরা বাড়িতে ছিল না।
গতকাল সোমবার রাতে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ  ইলিয়াছ বলেন, টইটং সোনাইছড়ি এলাকায় বালু উত্তোলন নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। তবে মরিয়ম খাতুন নামের এক নারী অভিযোগ দিলেও গরু লুটের বিষয়টি সত্য নয়। আমরা তদন্ত করে দেখেছি, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্যই মুলত গরু লুটের বিষয়টি তৈরি করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: